Visit our Facebook fan page Click Here

ব্ল্যাকহোল পর্ব৩ | Blackhole part-3

ব্ল্যাকহোল পর্ব৩ | Blackhole part-3
Color :
Size :

#Astronomy

আগের পর্বে জেনেছি 'ব্ল্যাকহোল
সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানতে
পারি,কিভাবে ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি হয়
এবং ব্ল্যাকহোলের ভর। আজ জানবো
ব্ল্যাকহোলের ভর অসীম হলে,
ব্ল্যাকহোল যেকোনো বস্তুকে
নিমিষে গিলে খায়, মহাবিশ্বে
ব্ল্যাকহোলের সংখ্যা,ব্ল্যাকহোলের
ঘটনাদিগন্ত এবং সোয়ার্জচাইল্ড
ব্যাসার্ধ॥
.
ব্ল্যাকহোলের ভর অসীম হলে
একটি কৃষ্ণবিবরের ভর লক্ষ-কোটি
সৌরভরের সমান বা অসীম পর্যন্ত হতে
পারে। ভর অসীম ধরে আমরা কিছু
সমীকরণের সমাধান করব। ধরা
যাক,কোনো কৃষ্ণবিবরের ভর
M,ব্যাসার্ধ
R,অভিকর্ষজ ত্বরণ g,আয়তন V,ঘনত্ব p এবং
মুক্তিবেগ Vb (মহাকর্ষীয় ধ্রুবক G)।
তাহলে অভিকর্ষজ ত্বরণ,g =GM/R²
=G∞/R²
=∞
g=∞
ঘনত্ব,p=M/V
=∞/V
= ∞
p=∞
মুক্তিবেগ,Vb=√(2GM/R)
=√(2G∞/R)
=∞
Vb=∞
সুতরাং কৃষ্ণবিবরের ভর অসীম হলে এর
অভিকর্ষজ ত্বরণ, ঘনত্ব এবং মুক্তিবেগ অসীম
হবে॥
.
ব্ল্যাকহোল যেকোনো বস্তুকে গিলে
খায়
আইনস্টাইনের The general theory of relativity
অনুযায়ী জড়ভরের উপস্থিতি তার
চারপাশের স্থান-কালকে বাঁকিয়ে
দেয়। একটি পাথর খন্ডকে উপর থেকে
ছেড়ে দেওয়া হলে তা নিচের দিকে
পতিত হয় অর্থাৎ পৃথিবীতে ফিরে আসে।
আমাদের কাছে মনে হবে পাথরটিকে
পৃথিবী টেনে নামিয়েছে
(গ্যালিলিও-নিউটনের ধারণানুযায়ী)।
আসলে ব্যাপারটি তা নয়। জড়ভর তথা
পৃথিবীর উপস্থিতির কারণে তার
চারপাশের স্থান-কাল বেঁকে যাওয়ার
ফলে বাধ্য হয়ে পাথরটি ভৃ-পৃষ্ঠে পতিত
হয়েছে। স্থান-কালের সমন্বয়কে আমরা
একটি রূপক উদাহরণ হিসেবে ব্যাখ্যা
করব। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত মঞ্চে
ছাদ হিসেবে সামিয়ানা ব্যবহার
করা হয়। এটি বিশেষ কিছু নয়। গ্রাম-
দেশে খাটের উপরও টানানো হয়। প্রথম
অবস্থায় সামিয়ানাটি সমতল থাকবে।
এখন একটি ভারি ফুটবলকে সামিয়ানার
উপর রাখা হলো। বলটির ওজনের কারণে
সামিয়ানাটি কিছুটা নিচের দিকে
নেমে এসে একটি গর্তের সৃষ্টি করবে।
সেই সাথে সামিয়ানাটি বেঁকে
কিছুটা ঢাল তৈরি করবে। এবার একটি
টেনিস বলকে যদি সামিয়ানার
কিনারার ঢালের পাড়ের উপর রাখি
তবে তা গড়িয়ে গিয়ে গর্তের
মাঝখানে থাকা ফুটবলটির গায়ে
গিয়ে পড়বে। ফুটবলের উপস্থিতির ফলে
যে ঢালের সৃষ্টি হয়েছে-সেই ঢালের
কারণে গড়িয়ে টেনিস বলটি ফুটবলের
উপরে গিয়ে পড়েছে। আমরা ফুটবলটিকে
পৃথিবীর সাথে তুলনা করতে পারি।
ফুটবল যেমন সামিয়াাটিকে বাকিয়ে
ফেলে, পৃথিবীও তেমনি তার
চারপাশের স্থান-কালকে বাঁকিয়ে
ফেলে। ফলে পাথর খন্ডটি বাঁকানো
স্থান-কালের কারণে পৃথিবীর উপর এসে
পড়বে। এখন আরও ভারি কোনো বস্তু যেমন
লোহার তৈরি গোলক সামিয়ানাটির
উপর রাখা হয় তবে তা
সামিয়ানাটিকে আরও বাঁকিয়ে
ফেলবে। ফলে টেনিস বলটি আরও দ্রুত
গতিতে লোহার গোলকের উপর গিয়ে
পড়বে।
এখন ব্ল্যাকহোলের প্রসঙ্গে আসা যাক।
ব্ল্যাকহোলের ভর প্রায় অসীম। অসীম
ভরের কারণে ব্ল্যাকহোলের
চারপাশের স্থান-কালকে অত্যধিক
পরিমাণ (অকল্পনীয়) বাঁকানো হবে এবং
তার শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের
মধ্যে যদি কোনো বস্তু (চন্দ্র, পৃথিবী,
সূর্য বা আরও বৃহৎ কিছু) থাকে তবে তা
প্রায় অসীম দ্রুতিতে ব্ল্যাকহোলের
মধ্যে গিয়ে পড়বে অর্থাৎ ব্ল্যাকহোল
সেই বস্তুকে এক নিমিষে গিলে খাবে॥
.
মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলের সংখ্যা
মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলের সংখ্যা কত–
প্রশ্নটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মহাবিশ্বের
দীর্ঘ ইতিহাসে নিশ্চয়ই বহু নক্ষত্র
পারমাণবিক জ্বালানি ফুরিয়ে
ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ
মনে করেন ব্ল্যাকহোলের সংখ্যা
দৃশ্যমান নক্ষত্রের চেয়েও বেশি হতে
পারে। শুধু আমাদের এইল গ্যালাক্সিতেই
দৃশ্যমান নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ১০,০০০
কোটি। আর এরকম ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি
থাকা সম্ভব। তাহলে চিন্তা করে দেখুন
আমাদের এই মহাবিশ্বে কি পরিমাণ
ব্ল্যাকহোল আছে । Big Bang এর মাধ্যমে
মহাবিশ্বে সৃষ্টি হয়েছিল তখন হাজার
হাজার কোটি ক্ষুদ্র কৃষ্ণগহ্বর জন্ম
নিয়েছিল যাদেরকে আদিম কৃষ্ণগহ্বর
বলা হয়। আর মহাবিশ্ব ধ্বংসের সময় সময়
তো সব পদার্থই কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে।
বর্তমানে মহাবিশ্বে কতগুলো কৃষ্ণবিবর
আছে তার সংখ্যা যদি নির্ণয় করা যায়
তবে সৃষ্টির প্রারম্ভিক অবস্থা সম্পর্কে
অনেক কিছুই জানা সম্ভব হবে।
.
ব্ল্যাকহোলের ঘটনাদিগন্ত
মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে সৃষ্ট যে অঞ্চল
থেকে আলো বা অন্য কোনোকিছুই
বেরিয়ে আসতে পারে না তাকে
ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর বলে। এই
কৃষ্ণগহ্বরের সীমানার নাম ঘটনাদিগন্ত।
অর্থাৎ কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশের ধারকে
ঘটনাদিগন্ত বলে। আকর্ষিত বস্তু কখনোই
কৃষ্ণগহ্বরে পতিত হয় না। বস্তুর পতন সবসময়ই
এই ধারে বা ঘটনাদিগন্তে হয়ে
থাকে। যে আলো কৃষ্ণগহ্বর থেকে
পালাতে চাইছে কিন্তু পারেনি,
বিফল হয়ে কিনারার চারপাশে ইতস্তত
ঘুরে বেড়াচ্ছে– সেই আলো দিয়েই
ঘটনাদিগন্ত গঠিত। অর্থাৎ কৃষ্ণগহ্বরের
সীমানা তথা ঘটনাদিগন্ত গঠিত হয় সে
সমস্ত আলোকরশ্মির পথরেখা দিয়ে– যে
রশ্মিগুলো কৃষ্ণবিবর থেকে নিষ্ক্রান্ত
হতে পারেনি। সেগুলি অনন্তকাল ধরে
সীমানায় ঘোরাফেরা করে।
তাহলে আমরা বলতে পারি ঘটনাদিগন্ত
হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বরের এমন একটি সীমানা
প্রাচীর– যে প্রাচীর দ্বারা কৃষ্ণবিবর
বাইরের দৃষ্টি থেকে তার অভ্যন্তরীণ
রহস্যময় ঘটনাগুলোকে লুকিয়ে রাখে।
কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত একটা একমুখী (one
way) ঝিল্লীর (membrane) মতো কাজ
করে। কোনো বস্তু ঘটনাদিগন্ত ভেদ
করে কৃষ্ণগহ্বরে পতিত হতে পারে, কিন্তু
কোনো কিছু সেখান থেকে বেরিয়ে
আসতে পারে না॥
.
ব্ল্যাকহোলের সোয়ার্জচাইল্ড
ব্যাসার্ধ
কৃষ্ণবিবরের সীমানার নাম ঘটনা
দিগন্ত। আর ঘটনাদিগন্তের ব্যাসার্ধের
নাম সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ
(Schwarzchild radius) ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল
সোয়ার্জচাইল্ডের নামানুসারে এই
নামকরণ করা হয় । একে r(s) দ্বারা
প্রকাশ করা হয়।
ব্ল্যাকহোল থেকে আলো অসীমে
নিষ্ক্রমণ করতে ব্যর্থ হয়। সেই আলো
সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধের মধ্যেই
ঘোরাফেরা করে। আমরা এখন
কৃষ্ণবিবরের সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ
বের করবো। ইতিমধ্যে আমরা মুক্তিবেগ
সম্পর্কে জেনেছি( পর্ব ১ এ)।
ধরা যাক, কোনো গোলাকার
কৃষ্ণবিবরের ভর M এবং ব্যাসার্ধ R।
তাহলে কৃষ্ণবিবরের মুক্তিবেগ, V(b)= √
(2GM/R).....(১)
এখন সমীকরণ (১) এর M কে ধ্রুব ধরে R কে
কমালে মুক্তিবেগ V(b) বেড়ে যাবে।
তাহলে R কে ক্রমাগত কমাতে থাকলে এক
পর্যায়ে মুক্তিবেগ আলোর বেগের (c) এর
সমান হবে। ধরা যা হক, R কে কমিয়ে r
(s) করলে মুক্তিবেগ আলোর বেগের সমান
হয়। তাহলে ১ নং সমীকরণে V(b) এর
জায়গায় c এবং ব্যাসার্ধ R এর জায়গায়
r(s) বসালে পাই,
c =√[2GM/r(s)]
=>c²=2GM/r(s)
সুতরাং r(s)=2GM/c²....(২)
এই r(s) কে বলা হয় সোয়ার্জচাইল্ড
ব্যাসার্ধ। কৃষ্ণবিবরের মুক্তিবেগ আলোর
বেগের সমান ধরে সোয়ার্জচাইল্ড
ব্যাসার্ধ r(s) বের করা হয়েছে যদিও
তার মুক্তিবেগ আলোর বেগের চেয়েও
বেশি(প্রায় অসীম)। যা হোক, এবার
আমরা সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধের
একটি সংজ্ঞা দেব।
=> কোনো নির্দিষ্ট ভরের গোলাকৃতি
বস্তু যে ব্যাসার্ধ প্রাপ্ত হলে কৃষ্ণবিবর
হিসেবে কাজ করে তাকে
সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ বলে।<=
(২) নং সমীকরণে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক G এবং
আলোর বেগ c ধ্রুবক। তাহলে লেখা যায়
r(s) =(2G/c²)*M
=> r(s)= ধ্রুবক*M
সুতরাং r(s)≈M....(৩) [বিঃদ্রঃ≈সমানুপাত
চিহ্ন]
সুতরাং কৃষ্ণবিবরের সোয়ার্জচাইল্ড
ব্যাসার্ধ উহার ভরের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ কৃষ্ণবিবরের সোয়ার্জচাইল্ড
ব্যাসার্ধ নির্ভর করবে তার ভরের উপর।
সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধের সাথে
সাথে আবার ঘটনাদিগন্তের সম্পর্ক আছে।
আমার জানি, ঘটনাদিগন্তের ব্যাসার্ধই
হচ্ছে সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ।
তাহলে কৃষ্ণবিবরের ঘটনাদিগন্তও নির্ভর
করবে এর ভরের উপর। ভর বাড়লে
ঘটনাদিগন্ত বাড়বে, ভর কমলে
ঘটনাদিগন্ত কমবে।
এবার আমরা (২) নং সমীকরণ ব্যবহার করে
সৌরভরের ১০গুণ ভরসম্পন্ন কোনো
কৃষ্ণগহ্বের সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ
বের করবো।
সূর্যের চেয়ে দশগুণ ভরসম্পন কোনো
কৃষ্ণগহ্বরের ভর,
M =সূর্যের ভর*10
=>M=2×10^30 ×10
=>M=2×10^31kg
মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G=6.673×10^-11Nm²/kg²
আলোর বেগ, c=3×10^8 m/s
সুতরাং সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ,r(s)
=2GM/c²
=[(2×6.673×10^-11×2×10^31) /(3×10^8)²]
=[(4×6.673×10^20)/ (9 ×10^16)]
=2.99×10⁴ m
= 29.9 km
অর্থাৎ সূর্যের ভরের দশগুণ ভরসম্পন্ন
কোনো তারকা বা কৃষ্ণবিবরের
সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ প্রায় ৩০
কি.মি। এভাবে আমরা যেকোনো
তারকার সোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ
বের করতে পারি॥
.
আগামী পর্বে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব
বোঝার উপায়, ব্ল্যাকহোল থেকে কেন
X-Ray বের হয়, ব্ল্যাকহোল ও নিউট্রন
তারকার পার্থক্য এবং আদিম কৃষ্ণগহ্বর
সম্পর্কে জানবো॥
.
ধন্যবাদ
.
তথ্যসূত্রঃ রহস্যে ভরা ব্ল্যাকহোল-
ফরহাদ

Post a Comment

Message via WhatsApp

Send instant messages & product details through Whatsapp.

Money Back

If goods have problem we'll return your good.

24/7 Support

Our dedicated support is available to help you.