ডার্ক ম্যাটার ও একজন নারী
সে রাতে আকাশ ছিল পরিষ্কার আর ঝকঝকে। দক্ষিণ আরিজোনার এক পাহাড়ের উপরের কিট পিক অবজারভেটরিতে টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে ছিল রুবিন। উদ্দেশ্য এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির নক্ষত্রগুলোর গতিবেগ পর্যবেক্ষণ। নক্ষত্রগুলো কতটা দ্রুত গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। নক্ষত্রগুলোর গতিবিধি যেন রহস্যে ঘেরা। কেন্দ্রের নিকটবর্তী নক্ষত্রগুলোর মতই দ্রুত ঘুরছে দূরের নক্ষত্রগুলোও। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা না। মহাকর্ষ বলের তারতম্যের কারণে দূরের নক্ষত্রগুলোর আরও কম গতিতে ঘোরার কথা। আমাদের সৌরজগতের দূরের গ্রহগুলো যেমন কাছের গ্রহগুলোর তুলনায় আস্তে ঘুরে।
অবস্থা এমন যে নক্ষত্রগুলোর মোট ভরের সাথে এই ঘূর্ণনগতি হিসেব করলে বাইরের দিকের নক্ষত্রগুলো ছিটকে গ্যালাক্সির বাইরে চলে যেত। রুবিন ধারণা করলেন, নিশ্চয়ই সেখানে এমন কিছু বস্তু বা ভর আছে যা দেখা যাচ্ছেনা। অবশেষে ১৯৭৮ সালে মোট দশটি স্পাইরাল গ্যালাক্সির এই রোটেশন কার্ভ পর্যবেক্ষণ করে রুবিন নিশ্চিত করেন অদৃশ্য বস্তুর অস্তিত্ব। যার নাম ডার্ক ম্যাটার।
ছোটবেলা থেকেই ভেরা কুপার রুবিন নামের এই নারী অনেক বাধা পেয়েছিলেন পদে পদে। নারী স্টুডেন্ট না থাকায় শুধু অ্যাস্ট্রোনমি নয়, বিজ্ঞানেই পড়তে নিষেধ করেছিল অনেকে। প্রিন্সটনের মত বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে তাকে অ্যাডমিশন দেয়নি। তবে কখনোই দমে যাননি। সে অনেক বড় ইতিহাস। তবে আরও বড় ইতিহাস হচ্ছে রুবিনই প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী যে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা আরো অনেক পর্যবেক্ষণের পরে দেখেন আমাদের দৃশ্যমান মহাজগতের ২১% ডার্ক ম্যাটার, ৭৫% ডার্ক এনার্জি, ৩.৪% ব্ল্যাকহোল ও ইন্টার-গ্যালাক্টিক গ্যাস, মাত্র ০.৪% দৃশ্যমান বস্তু যেমন গ্রহ, নক্ষত্র, টেবিল, চেয়ার, পশু-পাখি ইত্যাদি। ডার্ক ম্যাটার আসলে কি সেটা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। এরা চার্জহীন, সাধারণ কোন ক্ণা দিয়ে তৈরি নয়, আলোর শোষণ, প্রতিফলন বা প্রতিসরণ ইত্যাদি কিছুই করেনা- এতটুকু ধারণা করা গেছে।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান। আইন করে সমতা না করলেও তারা যে সর্বক্ষেত্রেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারে এটা তারই এক ক্ষুদ্র নিদর্শন।
#TheSecretSoldier