Wishlist & Checkout page is available for premium users Buy Now

Search Suggest

Astronomy | ব্ল্যাকহোল পর্ব২

Astronomy | ব্ল্যাকহোল পর্ব২
Color :
Size :


# Astronomy

ব্ল্যাকহোল
পর্ব২
আগের পর্বে জেনেছি ব্ল্যাকহোলের
পরিচয়, আবিষ্কারের ইতিহাস এবং কেন
ব্ল্যাকহোল থেকে আলো বের হয়ে
আসতে পারে না। আজ জানবো
ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি,
কিভাবে ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি হয় এবং
ব্ল্যাকহোলের ভর। আশা করা যায়
আগামী পর্বে কিছু গাণিতিক সমস্যা
দিয়ে ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে জানাতে
পারবো। এবার মূল আলোচনায় আসি।।
.
ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানতে
পেরেছি?
আয়োনীয় বিজ্ঞানী
অ্যানাক্সোগোরাসক জিজ্ঞেস করা
হয়ে ছিল জীবনের উদ্দেশ্য কি? তিনি
বলেছিলেন, "নক্ষত্র ও স্বর্গের রহস্যভেদ
করা।" নক্ষত্র ও স্বর্গ দূরে থাক- এখন পর্যন্ত
বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র পৃথিবীর হাজারো
রহস্যের কূল-কিনারা করতে পারেননি।
কারণ আমাদের জ্ঞান সীমিত, কিন্তু
আমরা অনেক নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি তবুও
আমরা সব জানতে সক্ষম নই!। নিউটনও
বলেছেন,"জ্ঞান সমুদ্রের তীরে নুড়ি
কুড়িয়েছি মাত্র।"
বিজ্ঞানীরা অ্যানাক্সোগোরাসে
নক্ষত্রের সম্পূর্ণ রহস্যভেদ করতে
পারেননি যেমন পারেননি
ব্ল্যাকহোলের পুরো রহস্যভেদ করতে।
ব্ল্যাকহোল থেকে আলো বের হয়ে
আসতে পারেনা বিধায় এর রহস্য উদঘাটন
করা বেশ কঠিন বা কষ্টসাধ্য। তবে
ব্ল্যাকহোলের মাত্র তিনটি রাশি
বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন।
রাশিগুলো হচ্ছে— ভর, বৈদ্যুতিক চার্জ
বা আধান এবং স্পিন( এটি নিজ অক্ষের
সাপেক্ষে কোনদিকে কত বেগে
আবর্তিত হচ্ছে)। অন্য আর কোনো তথ্য
জানার কায়দা নেই । সুতরাং বলা
যায়, যে বস্তুপিন্ড থেকে ব্ল্যাকহোল
সৃষ্টি হয়েছে, ব্ল্যাকহোল সৃষ্টির সাথে
সাথে সেই বস্তুপিন্ড সম্পর্কে অনেক তথ্য
(information) হারিয়ে গেছে । একটা
বিষয় বেশ আশ্চর্যজনক যে, প্রকৃতির বস্তুসমূহ
আধানহীন হলেও ব্ল্যাকহোলের আধান
থাকতে পারে। যে বস্তু থেকে
ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি হয়েছে সে বস্তু ও
ব্ল্যাকহোলের আধান একই হবে ।
.
তাহলে ব্ল্যাকহোল কিভাবে সৃষ্টি
হয়???
ব্ল্যাকহোল কিভাবে সৃষ্টি হয় তা
জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে একটি
নক্ষত্রের জীবনচক্র । যখন মহাকাশের
কোথাও হাইড্রোজেন গ্যাসের বিশাল
এক ভান্ডার নিজস্ব মহাকর্ষীয় আকর্ষণের
কারণে এক জায়গায় ঘনীভূত হয় তখনই একটি
নক্ষত্রের সৃষ্টি হয় । মহাকর্ষের কারণে
হাইড্রোজেন গ্যাস সংকুচিত হতে শুরু
করে এবং যতই সংকুচিত হয় ততই এর ঘনত্ব ও
তাপমাত্রা বেড়ে যায় । তাপমাত্রা
বেড়ে যাওয়া অর্থ পরমাণুর গতিশক্তি
বৃদ্ধি পাওয়া। সংকুচিত হাইড্রোজেন
গ্যাসের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে
একসময় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছায়
তখন ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে দুটি
হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে হিলিয়াম
নিউক্লিয়াসে পরিণত হয় এবং শক্তি
উৎপন্ন হয় ফলে আমরা তারকা দেখতে
পাই। প্রচন্ড চাপে নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ
কণাগুলো সর্বদা কেন্দ্রের বিপরীতে
বাইরের দিতে ছিটকে বেরিয়ে আসতে
চায়। অর্থাৎ নক্ষত্রের কণাগুলোর উপর
সর্বদা একটি বহিমুর্খী চাপ ক্রিয়াশীল
থাকে। কিন্তু মহাকর্ষের কারণে তা
হতে পারে না । মহাকর্ষীয় বল নক্ষত্রের
বরাবর ক্রিয়াশীল থাকে। বহিমুর্খী
চাপের কারণে নক্ষত্র ফেটে যেতে
চায়, আবার মহাকর্ষীয় বলের কারণে তা
একত্রে ঘনীভূত হতে চায়। এ দুয়ের ফলে
একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হয় ফলে
নক্ষত্রগুলো বহুকাল ধরে সুস্থিত থাকে।
ঠিক যেন নিউটনের তৃতীয় সূত্র।
কিন্তু একসময় নক্ষত্রের সকল হাইড্রোজেন
গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি ফুরিয়ে
যাবে । নক্ষত্রটির জ্বালানি শুরুতে
যতো উত্তপ্ত হবে, ততই তার জ্বালানি
ফুরানোর হার বেশি হবে । আমাদের
সূর্য এমন একটি নক্ষত্র যার জ্বালানি ৫০০
কোটি বছর পর ফুরিয়ে যাবে এবং সূর্য
নিভে যাবে। বড় নক্ষত্রের তাপমাত্রা
বেশি থাকে, তাই জ্বালানিও খরচও
বেশি হয়(সূর্যের চেয়েও অধিকতর দ্রুত
হারে তাদের জ্বালানি শেষ হয়)।
একটি নক্ষত্রের জ্বালানি শেষ হয়ে
সেটা শীতল হতে থাকে এবং কেন্দ্রের
দিকে মহাকর্ষের টানে সংকুচিত হতে
থাকে। কারণ সংকোচন রোধে যে
বহিমুর্খী চাপ প্রয়োজন তা অনুপস্থিত।
বহিমুর্খী চাপ সৃষ্টি করার জন্য নক্ষত্রের
ভেতরে আর শক্তি উৎপন্ন হবে না কারণ
জ্বালানি শেষ। জ্বালানি নেই বলে
ফিউশন বিক্রিয়া বন্ধ। বহিমুর্খী
চাপের অনুপস্থিতিতে নক্ষত্রের
সংকোচনের পরিমাণ কোথায় গিয়ে
শেষ হতে তা জানার জন্য
পৃথিবীবাসীকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত
অপেক্ষা করতে হয়।
১৯২৮ সালে ভারতীয় গ্রাজুয়েট ছাত্র
'সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর'
পড়াশোনার জন্য জাহাজে করে
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে
রওনা হন। জাহাজে বসে তিনি অংক
করে বার করছিলেন- সমস্ত জ্বালানি
ফুরিয়ে গেলে নিজ মহাকর্ষের বিরুদ্ধে
নিজেকে বহন করতে হলে একটি নক্ষত্রের
কত ভর হতে হবে । তিনি ভেবে
দেখলেন: নক্ষত্রটি সংকুচিত হতে হতে
একসময় এমন একটা পরিস্থিতি হবে যখন
পরমাণুগুলো একেবারে গায়ে গায়ে
লেগে যাবে। তখন আর সেটি ছোট হতে
পারবে না । পলির অপবরজননীতি
অনুসারে তাদের গতিবেগ বিভিন্ন
হওয়া আবশ্যক। এজন্য তারা পরস্পর থেকে
দূরে চলে যেতে থাকে। ফলে নক্ষত্রটি
প্রসারণের প্রবণতাবিশিষ্ট হয়। নক্ষত্রের
জীবনের শুরুতে মহাকর্ষীয়
বলের সাথে ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা
করেছিল ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি
যা বহিমুর্খী চাপ সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু এক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায়
চাপের বদলে পলির বর্জননীতি বা
অপবর্জনতত্ত্বভিত্তিক বিকর্ষণ কাজ
করেছে। ফলে নক্ষত্রটি নিজস্ব ব্যাস
অপরিবর্তিত রাখতে পারে। কিন্তু
অপবর্জননীতির বিকর্ষণের একটি সীমা
আছে। আপেক্ষিকতত্ত্ব নক্ষত্রের ভিতরকার
কণিকাগুলোর গতিবেগের পার্থক্যের
সীমা বেধে দিয়ে তা হলো আলোর
দ্রুতি। এর অর্থ:- নক্ষত্রটি খুব বেশি ঘন
হলে অপবর্জনজনিত বিকর্ষণ মহাকর্ষীয়
আকর্ষণের চাইতে কম হবে । যদি তাই হয়
তবে নক্ষত্রটি মহাকর্ষের প্রবল আকর্ষণকে
ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না ।
চন্দ্রশেখর হিসাব করে দেখলেন শীতল
নক্ষত্রের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে
দেড়গুণের চাইতে বেশি হলে সে
নিজে আর মহাকর্ষ বলের বিরুদ্ধে লড়তে
পারবে না। এই ভর চন্দ্রশেখর সীমা
(Chandrashekhar limit) নামে পরিচিত। রুশ
বিজ্ঞানী "লেভ ডেভিডোভিচ
ল্যান্ডো" একই সময়ে একই ধরনের
আবিষ্কার করেছিলেন। একটি শীতল
নক্ষত্রের ভর যদি চন্দ্রশেখরের সীমাভ
চেয়ে কম হয় তবে সেটা অন্তিম দশায় '
শ্বেত বামন ' (White Dwarf) নক্ষত্রে পরিণত
হবে । এটি নক্ষত্রের শান্তিময় নিরাপদ
মৃত্যু। শ্বেত বামনের ব্যাসার্ধ কয়েক
হাজার মাইল এবং ঘনত্ব প্রতি ঘন
ইঞ্চিতে কয়েকশ টন। শীতল নক্ষত্রের
ভিতরকার ইলেকট্রদগুলির অন্তর্বর্তী
অপবর্জননীতির কারণে সৃষ্ট বিকর্ষণই
শ্বেত বামন নক্ষত্রকে টিকিয়ে রাখে ।
মহাকাশে এরকম শ্বেত বামন নক্ষত্র বহু
আছে। আজ থেকে ৫০০ কোটি বছর পর
আমাদের সূর্য শ্বেত বামন হিসেবে
মৃত্যুবরণ করবে। তখন এর ব্যাস হবে মাত্র
কয়েক হাজার মাইল।
'ডেভিডোভিচ ল্যান্ডো' নক্ষত্রের
সম্ভাব্য আরও একটি অন্তিম দশার ধারণা
দিয়েছিলেন। এদের ভর সূর্যের এক
কিংবা দুগুণের ভিতরে। কিন্তু আকারে
শ্বেত বামনের চাইতেও ছোট। এদেরও
রক্ষা করে অপবর্জনতত্ত্বভিত্তিক বিকর্ষণ।
কিন্তু এখানে অপবর্জননীতির কারণে সৃষ্ট
বিকর্ষণ আন্তঃইলেকট্রনের পরিবর্তে
নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে হয়ে থাকে।
এগুলিকে বলা হয় নিউট্রন নক্ষত্র (Neutron
Star)। এদের ব্যাস মাত্র দশ মাইলের
মতো কিন্তু ঘনত্ব প্রতি ইঞ্চিতে কোটি
কোটি টন। এগুলি সম্পর্কে যখন প্রথম
ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় তখন নিউট্রন নক্ষত্র
পর্যবেক্ষণের কোনো উপায় ছিল না
(নিউট্রন নক্ষত্রগুলো কিন্তু ১৯৬৭ সালের
আগে দেখা যায়নি। কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেলিন বেল এবং
অ্যান্টানি হিউয়িশ পালসার নামে
একরকম বস্তুপিন্ড আবিষ্কার করেছিলেন
যা ছিল নিউট্রন নক্ষত্র বা তারকা)।
সুতরাং বোঝা গেল, যে সকল শীতল
নক্ষত্রের নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের
দেড়গুণের তথা চন্দ্রশেখরের সীমার
ভেতরে থাকবে তা শ্বেত বামন বা
নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হবে। কিন্তু যে
সকল নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের দেড়গুণের
বেশি হবে তখন কি হবে? কারণ সব শীতল
নক্ষত্রই যে চন্দ্রশেখর সীমার ভেতরে
থাকবে– এমন কোনো কথা নেই।
যে সকল নক্ষত্রের ভর চন্দ্রশেখরের
সীমার চাইতে বেশি হয়, জ্বালানি
ফুরিয়ে গেলে তাদের বিরাট সমস্যার
মধ্যে পড়তে হয় এবং পরিণতি চরমে
পৌঁছে। কখনও কখনও সেগুলি বিস্ফোরিত
হয়ে নিজের ভরের কিছু অংশ উগড়ে
ফেলে চন্দ্রশেখর সীমার মধ্যে আসে
এবং শ্বেত বামন বা নিউট্রন নক্ষত্রে
পরিণত হয়। ঘটনাটিকে এভাবে তুলনা
করা যায়– একটি বাচ্চাকে যদি
অতিরিক্ত খাবার দেওয়া হয় যা তার
পেটের ধারণ ক্ষমতার বেশি, তবে
বাচ্চাটি শারীরিকভাবে অনেকটা
অসুস্থতা অনুভব করে। যখন পরিস্থিতি
চরমে পৌঁছায় তখন সে তার খাবারগুলি
বমি করে ফেলে দিয়ে শারীরিক
ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি সম্পূর্ণ
স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা। তবে ঘটনাটা অনেকটা
আশ্চর্যজনক বটে এই কারণে যে, নক্ষত্রটি
কি করে জানলো তার ওজন কমাতে হবে।
যা হোক, সব সময় যে এমনটি ঘটবে তা
নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যদি
এমনটি না ঘটে তবে মহাকর্ষের প্রবল
আকর্ষণে নক্ষত্রটির আয়তন কমতে কমতে এমন
অবস্থায় পরিণত হবে যাতে ঘনত্ব অসীম
সে দাঁড়ায়। কেউ তার এই ভয়ঙ্কর
সংকোচন থামাতে পারবে না। তখন এই
নক্ষত্রের মৃত্যু আর শান্তিময় মৃত্যু হয়
না,ভয়ঙ্কর একটি মৃত্যু।
ভারতীয় বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর রয়াল
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সভায়
তাঁর এই যুগান্তকারী
আবিষ্কারের কথা ঘোষণা
করেছিলেন। ঘোষণার পরপরই
চন্দ্রশেখরের শিক্ষক পৃথিবীখ্যাত
বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটন উঠে
দাঁড়িয়ে নিজের ছাত্রকে সকলের
সামনে তুলোধুনো করতে শুরু করলেন।
এডিংটনের ভাষ্য," চন্দ্রশেখরের
গবেষণার ফলাফল সম্পূর্ণ ভুল ও অর্থহীন।
একটি নক্ষত্রের আয়তন কমতে কমতে বিলীন
হয়ে যাবে– এটি অসম্ভব ব্যাপার এবং
ইহা বলাও এক ধরনের পাগলামো।"
আর্থার এডিংটন তখন তারকার গঠন
সম্পর্কে পৃথিবীখ্যাত অগ্রগণ্য বিজ্ঞানী
আর চন্দ্রশেখর অল্পবয়সী তরুণ বিজ্ঞানী।
কাজেই অধিকাংশ বিজ্ঞানী আর্থার
এডিংটনের পক্ষ নিলেন এবং তাদেরও
মেনে নিতে কষ্ট হলো একটি নক্ষত্রের
আয়তন কমে বিন্দুতে পরিণত হতে পারে।
এমনকি আইনস্টাইন নিজে একটি প্রবন্ধে
দাবি করেছিলেন নক্ষত্রের আয়তন কখনও
শূন্যে পরিণত হতে পারে নান তাই
চন্দ্রশেখর কেমব্রিজ ছেড়ে মনের দুঃখে
যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেন এবং
জ্যোতিবিজ্ঞানের অন্য বিষয়ের
গবেষণায় মনোনিবেশ করলেন। মজার
ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৮৩ সালে
চন্দ্রশেখরকে নোবেল দেওয়া হয় তাঁর
অভিমান করে ছেড়ে দেওয়া শীতল
নক্ষত্রের ভরের সেই সীমা (চন্দ্রশেখর
লিমিট) নির্ধারণ সম্পর্কিত গবেষণার
জন্য।
চন্দ্রশেখর দেখিয়েছিলেন কোনো
নক্ষত্রের ভর যদি 'চন্দ্রশেখর লিমিট'
অতিক্রম করে তবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে
সেটি সংকুচিত হওয়া শুরু করে।
চন্দ্রশেখর যেখানে শেষ করলেন সেখান
থেকেই শুরু করলেন মার্কিন তরুণ
বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহেইমার। ১৯৩৯
সালে আইনস্টাইনের সাধারণ
আপেক্ষিকতত্ত্ব ব্যবহার করে
ওপেনহেইমার ধারণা দেন সংকুচিত
হতে হতে সেই নক্ষত্রের কি অবস্থা হবে।
তবে তাঁর গবেষণার ফল যাচাইয়ের জন্য
তখনকার দিনের মহাকাশ পর্যবেক্ষণ
প্রযুক্তি অপর্যাপ্ত ছিল। তিনি এই
বিষয়ের গবেষণা আর বেশি দূর এগিয়ে
নিয়ে যেতে পারেননি। কারণ ২য়
বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং তিনি পারমাণবিক
বোমা তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
যুদ্ধের ডাবাডোলে মানুষ প্রায় নক্ষত্র
সংকোচনের বিষয়টি ভুলতে বসে। ১৯৬০
সালের দিকে বিজ্ঞানীরা আবার
প্রায় ভুলতে বসা এই বিষয়টিতে ফিরে
আসেন।
কারণ তখন আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা
প্রয়োগের ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের
পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ বেশ শক্তিশালী
হয়ে উঠেছিল । অনেকেই
ওপেনহেইমারের সমাধানটি নতুন করে
আবিষ্কার করেন।
এবার ওপেনহেইমারের গবেষণার ফলাফল
নিয়ে আলোচনা করা যাক। ধরা যাক,
একটি নক্ষত্র সংকুচিত হতে শুরু করেছে।
এটি যতোই সংকুচিত হচ্ছে ততই আরো
ছোট জায়গার ভেতরে পুরো ভরটুকু
আঁটানো হচ্ছে। এর ফলে মহাকর্ষ বল
বেড়ে যাচ্ছে। নক্ষত্রটি সংকুচিত হতে
হতে যখন একটি ক্রান্তিক ব্যাসার্ধ
(critical radius) প্রাপ্ত হবে তখন এর
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র এত বেশি হবে যে,
আলো সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে
পারবে না । আপেক্ষিকতত্ত্ব অনুযায়ী
কোনো কিছুই আলোর গতিবেগ থেকে
বেশি হতে পারে না। সুতরাং নক্ষত্র
থেকে আলোই বেরিয়ে আসতে পারে
না তখন অন্য কিছু বের হওয়ার প্রশ্নই আসে
না । আলো বের না হলে তাকে দেখা
যাবে না । নক্ষত্রের এরকম অবস্থা যখন হয়
তখন সেটিকে বলা হয় ব্ল্যাকহোল বা
কৃষ্ণগহ্বর বলে। ব্ল্যাকহোল এক হিসেবে
পতিত (collapsed) এবং মৃত নক্ষত্র যার
কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
.
ব্ল্যাকহোলের ভর
গাণিতিকভাবে ব্ল্যাকহোলকে
ব্যাখ্যা করতে যে তিনটি রাশি
দরকার তাদের মধ্যে অন্যতম একটি
গুরুত্বপূর্ণ রাশি হচ্ছে ভর। নক্ষত্র
সংকোচনের ফলে যে সমস্ত কৃষ্ণগহ্বর
গঠিত হয়, সেগুলোর ভর নির্ভর করবে যে
নক্ষত্রটি সংকুচিত হয়ে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত
হয়েছে তার উপর। তাছাড়া অন্যান্য
পদার্থ যেমন গ্যাস, ধুলিকণা প্রভৃতি যা
নক্ষত্রে পতিত হয়েছিল সেগুলোও ভর
নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। নক্ষত্র
সংকোচনের ফলে যেসব কৃষ্ণগহ্বর গঠিত
হয়েছে সেগুলোর ভর হতে পারে
সৌরভরের দুই-তিদ গুণ থেকে শুরু করে
লক্ষ-কোটি এমনকি অসীম পর্যন্ত হতে
পারে। ভর যদি অসীম হয় তবে কৃষ্ণগহ্বরের
বাস্তব অস্তিত্ব চিন্তা করা আমাদের
জন্য খুবই কঠিন। ভর একটি বাস্তব রাশি।
কিন্তু ব্ল্যাকহোলের অবাস্তব একটি
গাণিতিক বিন্দুতে কিভাবে সুবিশাল
ভরের পদার্থ থাকতে পারে তার উত্তর
আমাদের অজানা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য
যে ব্ল্যাকহোলেভ এক চামচ গাঠনিক
উপাদানের ভর হতে পারে কয়েকশ টন বা
তারও বেশি। তবে আদিম ব্ল্যাকহোলের
ভর, নক্ষত্র সংকোচনের ফলে উৎপন্ন
ব্ল্যাকহোলের চেয়ে কম ( আদিম
ব্ল্যাকহোল নিয়ে পরে আলোচনা করা
হবে)।
.
আগামী পর্বে ব্ল্যাকহোলের ভর অসীম
হলে, ব্ল্যাকহোল যে কোনো বস্তুকে
গিলে খায়, মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলের
সংখ্যা, ব্ল্যাকহোলের ঘটনাদিগন্ত
এবং ব্ল্যাকহোলের সোয়ার্জচাইল্ড
ব্যাসার্ধ নিয়ে আলোচনা করবো। কিছু
গাণিতিক
সমস্যার সমাধানও করার চেষ্টা করবো।
ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: ১.রহস্যে ভরা ব্ল্যাকহোল-ফরহাদ
২) জ্যোতিঃপদার্থর্বিজ্ঞান পরিচিত-
ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী
৩) Kip Thorne- Black Holes & Time Warps
৪) Black Holes, Baby Universes and Other
Essays- Dr. Stephen Hawking
ছবি: সংগৃহীত
# মন্ত্রীমশা_ভাঁড়

Post a Comment

Message via WhatsApp

Send instant messages & product details through Whatsapp.

Money Back

If goods have problem we'll return your good.

24/7 Support

Our dedicated support is available to help you.